নোয়াখালী জেলা
নোয়াখালী
জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম
বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বর্তমান
নোয়াখালী জেলা আগে ফেনী,
লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা
নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল
ছিল, যা এখনও বৃহত্তর
নোয়াখালী নামে পরিচিত।
ভৌগলিক
সীমানা
চট্টগ্রাম
প্রশাসনিক বিভাগের অধীন নোয়াখালী জেলার
মোট আয়তন ৩৬০১ বর্গ
কিলোমিটার। নোয়াখালী
জেলার উত্তরে কুমিল্লা, দক্ষিণে
বঙ্গোপসাগর, পূর্বে ফেনী ও
চট্টগ্রাম জেলা এবং পশ্চিমে
লক্ষীপুর ও ভোলা জেলা
অবস্থিত। বছরব্যাপী
সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ৩৪.৩
ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার
গড় ১৪.৪ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। বছরে
গড় বৃষ্টিপাত ৩৩০২ মিমি।
এই জেলার প্রধান নদী
বামনি এবং মেঘনা।
নোয়াখালীর
শহর
নোয়াখালী
সদর মাইজদি ৯টি ওয়ার্ড
নিয়ে গঠিত। শহরের
মোট জনসংখ্যা ৭৪,৫৮৫; এর
মধ্যে ৫১.৫০% পুরুষ
এবং ৪৮.৫০% মহিলা;
জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে
৫৯১৫। শহুরে
লোকদের মধ্যে শিক্ষিতের হার
প্রায় ৬০.৭০%।
নোয়াখালী সদরের আদি নাম
সুধারাম। ১৯৪৮
সালে যখন উপজেলা সদর
দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন
হয়ে যায়, তখন তা
৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে বর্তমান
মাইজদিতে স্থানান্তর করে হয়।চৌমুহনী নোয়াখালীর আরেকটি ব্যস্ত শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্র, যা একসময়ে মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল।বসুরহাট শহরটি দ্রুত বেড়ে উঠছে এবং ব্যস্ত শহরের রুপ নিচ্ছে । এই শহরের অধিবাসীদের একটি বড় অংশ কাজের জন্য আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। সম্ভবত এই জন্যেই এখানে বাড়ী এবং জমির দাম খুবই বেশি, প্রায় রাজধানী ঢাকার সমপরিমাণ।
ইতিহাস
নোয়াখালী
জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী
সদর থানার আদি নাম
সুধারাম। ইতিহাসবিদদের
মতে একবার ত্রিপুরা-র
পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া
নদীর পানিতে ভুলুয়া-র
উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি
জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই
অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়
হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি
বিশাল খাল খনন করা
হয়, যা পানির প্রবাহকে
ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ,
সোনাইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে
মেঘনা এবং ফেনী নদীর
দিকে প্রবাহিত করে। এই
বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর
আঞ্চলিক ভাষায় "নোয়া (নতুন) খাল"
বলা হত, এর ফলে
"ভুলুয়া" নামটি একসময়ে পরিবর্তিত
হয়ে ১৬৬৮ সালে হয়ে
যায় "নোয়াখালী"।
নোয়াখালীর
ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০
সালে নোয়াখালীর জনগণের জিহাদ আন্দোলনে
সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯২০ সালের
খিলাফত আন্দোলন। জাতিগত
সংঘাত ও রায়টের পর
১৯৪৬ সালে মহাত্মা গান্ধী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ করেন। বর্তমান
বেগমগঞ্জ উপজেলার জয়াগ নামক স্থানে
গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম
রয়েছে, যা "গান্ধী আশ্রম" নামে
পরিচিত/১৭৯০ সালের পর
হতে নোয়াখালী জেলা বহুবার ঘুর্ণিঝড়,
বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে
প্রায় ১০ লক্ষ লোকের
প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে
নোয়াখালী জেলার অনেকে ছিলেন। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে
পাক হানাদার বাহিনীর সাথে বহু রক্তক্ষয়ী
যুদ্ধে নোয়াখালীর মাটি রঞ্জিত হয়ে
আছে। ১৫ই
জুন, ১৯৭১ সালে সোনাপুর
আহমদীয়া স্কুলের সম্মুখ যুদ্ধে প্রায়
৭০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা
শহীদ হয়। ১৯৭১
সালের ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী
বেগমগঞ্জ থানার গোপালপুরে গণহত্যা
চালায়। নিহত
হন প্রায় ৫০ জন
নিরস্ত্র মানুষ। নোয়াখালী
জেলা স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের
৭ ডিসেম্বর।
অর্থনীতি
নোয়াখালী
জেলার মোট আয় ৩৭৮
কোটি টাকা (১৯৯৯-২০০০)। জেলার
মোট আয়ের ৪৮% আসে
চাকরি বা সেবামূলক খাত
থেকে। অপরদিকে
আয়ের মাত্র ১৭% আসে
শিল্পখাত থেকে। নোয়াখালী
জেলার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশ
হারে হচ্ছে। নোয়াখালী
জেলার মানুষের মাথা পিছু আয়
১৩,৯৩৮ টাকা (১৯৯৯-২০০০)।
চিত্তাকর্ষক
স্থান
নিঝুম
দ্বীপ - এটি নোয়াখালী জেলার
দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম - আন্তর্জাতিক
ক্রিকেট ভেন্যু।
বজরা শাহী মসজিদ - বজরা।
লুর্দের
রাণীর গীর্জা - সোনাপুর।
গান্ধি
আশ্রম - জয়াগ, সোনাইমুড়ি।
ম্যানগ্রোভ
বনাঞ্চল - ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চর জব্বর।
নোয়াখালী
জেলা জামে মসজিদ - মাইজদী।
নোয়াখালী
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার - মাইজদী।
বীরশ্রেষ্ঠ
শহীদ মোঃ রুহুল আমিন
গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
- সোনাইমুড়ী।
No comments:
Post a Comment