Friday, February 3, 2012

ইংরেজি শেখা দরকার হলেও শেখানোর ব্যবস্থা দুর্বল


খালেদা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্স করার সময় দেখলেন, তার মধ্যে ইংরেজি ভীতি রয়েছে। কারণ, ইংরেজি বলতে পারতেন না এবং লিখেও নিজের ভাব প্রকাশ করতে পাতেন না তিনি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে একটি আড়াই মাসের কোর্স চালু ছিল। তিনি দুই হাজার ২০০ টাকা দিয়ে সেই কোর্স করে ইংরেজি বলা ও লেখা শেখেন।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর আগে ইংরেজি ভাষা শেখার ঐ কোর্স খুব বেশি কাজে আসেনি তার। তবে তার ইংরেজি ভীতি দূর হয়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’
এখন তিনি কক্সবাজারে একটি ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। তবে তিনি বলেন, ‘ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, আমার ইংরেজি বিষয়ে ভালো ধারণাই নেই। ক্লাসে পড়াতে গিয়ে প্রথমদিকে কিছুটা লজ্জাবোধ হতো। এটা কাটিয়ে উঠতে নিজেকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তারপরও মনে হচ্ছে, কিছু ঘাটতি আছে। একই অবস্থা আমার সহকর্মীদের মধ্যেও দেখতে পেয়েছি। আমার মতো সেই শিক্ষকরাও মনে করেন, ক্লাসে পাঠদানের জন্য ইংরেজি ভাষা বিষয়ে আমাদের আরও ভালো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।’
বিশ্বায়নের ফলে এখন সবারই ইংরজেরি প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষরাও ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে এখন বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে শুধু মাতৃভাষা বাংলা দিয়ে সব কাজ করা সম্ভব নয়। মাতৃভাষায় সব কিছু করতে চাইলেও আমাদের ইংরেজি থেকে অনেক অনুবাদ করে নিতে হয়। সেজন্যও ইংরেজি জানা চাই। জীবনযাত্রার পরিবর্তন থেকে শুরু করে চাকরি পাওয়া, প্রমোশন, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, আমদানি-রফতানির কাজের জন্য ইংরেজি জানার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছেই।
ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র পড়তে, বিদেশি ওষুধ ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহারবিধি পড়তে, বেসরকারি ব্যাংকে একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে টাকা জমা ও তোলার সমস্ত প্রক্রিয়ায়, বড় কোম্পানিতে চাকরির দরখাস্ত করতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এবং বিদেশে যাবার জন্য ওই দেশের ভিসার দরখাস্ত করতে প্রয়োজন ইংরেজির। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে আবেদন, নথি ও রায় লেখা হয় ইংরেজিতে।
অনার্স, মাস্টার্সসহ উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ বই ইংরেজিতে। এসব বই পড়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য ইংরেজি জানা দরকার। বিদেশে গিয়ে দক্ষ শ্রমিক হতে হলেও ইংরেজির প্রয়োজন। নার্সিং পেশায় ও পর্যটন শিল্পেও ইংরেজি জানাটা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জীবনের প্রায় প্রতিটি প্রয়োজনেই ইংরেজি জানাটা এখনও জরুরি। তাই ইংরেজি শেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিনই বাড়ছে। ‘বিবিসি জানালা’র মাধ্যমে ইংরেজি শেখার কার্যক্রম শুরুর আগে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট থেকে বছর দুই আগে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ ভাগ মানুষ তাদের ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য ইংরেজি শেখাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর ৯৯ ভাগ মানুষ তার সন্তানদের ইংরেজি শেখাতে চান ।
এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই ইংরেজিতে ফল খারাপ করতে দেখা গেছে। এ বছরই প্রথম অনুষ্ঠিত অষ্টম শ্রেণী শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলেও দেখা গেছে ইংরেজিতে ফেলের হার বেশি।
নানা কারণে সরকারিভাবে ইংরেজি শেখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। শিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন (টিকিউআই-সেপ) প্রকল্প বেশ কয়েক বছর ধরে চালু আছে। ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পাঁচটি দেশি ও বিদেশি এনজিও এদেশে ২০০৮ সাল থেকে ‘ইংলিশ ইন অ্যাকশন (ইআইএ)’ নামে একটি প্রকল্পে কাজ করছে। এটা ২০১৭ সাল পর্যন্ত চলবে। মোট ২৫ লাখ বাংলাদেশিকে ইংরেজিতে দক্ষ করার লক্ষ নিয়ে কাজ করছে এই প্রকল্প। এছাড়া দেশে ইংরেজি শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলীকে সভাপতি করে ১৬ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটি মাত্র দুই মাসের মধ্যে সব দিক পর্যবেক্ষণ করে ইংরেজি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বিগত দেড় বছরেও এই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ঢাকা ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, সাইফুর’স, আমেরিকান সেন্টার, এফএম মেথডসহ এখন অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি শেখার কোর্স করাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ভেদে এসব কোর্স দুই মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে এসব কোর্স করে বেশিরভাগ মানুষই ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।
ইংরেজির মানোন্নয়ন বিষয়ে সরকার গঠিত কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইংরেজি এখন শুধু একটা ভাষা নয়। তথ্য-প্রযুক্তির মতো এটাও একটা প্রযুক্তি। ইংরেজি না জানলে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বায়নের এই যুগে পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভালো ইংরেজি শেখার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যমের কিছু স্কুল মোটামুটি ইংরেজি শেখাচ্ছে। তবে বেশিরভাগেরই খারাপ অবস্থা। উচ্চারণ ঠিক হচ্ছে না। ভুল ইংরেজি শিখছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও নিজের মতো করে ইংরেজি শেখাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের শেখানোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শেখার জন্য আর্থিক সামর্থ্য খুব অল্প মানুষের আছে। গ্রামগঞ্জে থাকা দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই ইংরেজি শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দক্ষ ইংরেজি শিক্ষকের অভাবে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি ভাষা শিখতে পারছে না। বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা এটাই—যারা ইংরেজি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তারা সুযোগ-সুবিধা ও বেতনভাতা কম হওয়ার কারণে শিক্ষকতা পেশায় যাচ্ছেন না।
কমিটির আরেকজন সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি দু’ভাবেই ইংরেজি শেখানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের সমন্বয় নেই। সব ক্ষেত্রেই ইংরেজি শেখার মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু একটার পর একটা প্রজেক্ট চলে আসছে। যার কারণে ইংরেজি শেখার যে প্রজেক্ট নিয়ে সবাই মাঠে নামছে, সেটা খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারছে না। তবে সব ক্ষেত্রেই মানুষ কিছু না কিছু শিখছে। কিন্তু যেভাবে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে সেভাবে নয়।
সোহেলী তাহসীন তেজগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেও ইংরেজি ভালো বলতে পারতেন না। পরে ভালো একটি চাকরির জন্য বছর দুই আগে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে বেসিক ইংরেজির একটি কোর্স করেন।
বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে অফিসার পদে কর্মরত তাহসীন বলেন, ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে কোর্স করার পরও ইংরেজিতে তিনি দক্ষ নন। কোনোরকমে কাজ চালাতে পারেন। ইংরেজিতে কথোপকথনের অভ্যাস না থাকার কারণেই এটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে সাফায়েতি নাসরীন মাস্টার্স করার পর এমবিএ’তে ভর্তি হওয়ার আগে সাইফুর’স-এর মৌচাক শাখা থেকে প্রায় ছয় হাজার টাকা ব্যয় করে ইংরেজি বলা ও উচ্চারণের ওপর দু’টি কোর্স করেন। দু’টি কোর্সই ছিল তিন মাসের। এখন তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করছেন। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি অনর্গল বলতে না পারলেও এমবিএ ক্লাসে শিক্ষকদের লেকচার সহজেই বুঝতে এবং বইগুলো পড়তে পারি। ইংরেজি কোর্স করে এটাই লাভ হয়েছে। তবে ইংরেজি বলা ও লেখায় পারদর্শী হতে পারিনি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত দৈন্দিন জীবনে কথোপকথনের মাধ্যমে যোগাযোগধর্মী ইংরেজি ভাষা শেখায়। ফলে পরবর্তীতে কথোপকথনের অভ্যাস না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এসব কোর্স করাকালীন যেটুকু দক্ষতা অর্জন করেন সেটা ভুলে যান।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ইংরেজি শেখার জন্য বেশ কয়েকটি কোর্স করায়। ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনের জন্যও কিছু কোর্স করানো হয় এখানে। কিন্তু এখান থেকে কোর্স করার খরচ খুব বেশি। তাই অল্প কিছু মানুষই এখান থেকে ইংরেজি শেখার সুযোগ পান।
সাইফুর’স, এফএম মেথড, ঢাকা ল্যাংগুয়েজ ক্লাব ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি শেখার খরচ তুলনামূলক কম। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ইংরেজি বলা, লেখা, উচ্চারণ সঠিক করার জন্যই বেশি মানুষ কোর্স করতে আসেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য আইইএলটিএস, টোফেল ইত্যাদি পরীক্ষা দিতেও ইংরেজির কোর্স করেন অনেকে।
আর বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে চলমান ইআইএ প্রজেক্টের আওতায় দেশের ছয়টি বিভাগের ২৪টি উপজেলার ৩৪৫টি স্কুলের প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সব ছাত্রছাত্রীকে সহজ ভাষায় ইংরেজি শেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া এই প্রজেক্টের একটি অংশ বিবিসি জানালার মাধ্যমে সব বয়সী মানুষকে গণমাধ্যমের সাহায্যে প্রায় বিনামূল্যে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে।
স্কুল পর্যায়ে ২৩০টি প্রাথমিক ও ১১৫টি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের পুরো সিলেবাস সহজ ভাষায় শেখানোর জন্য আলাদা করে লেসন তৈরি করা হয়েছে। সেই লেসনগুলো অডিও এবং ভিডিও সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে। এছাড়া এসব স্কুলের প্রায় ৭০০ ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকের প্রতি মাসে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ও ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের সহজে পড়ানোর জন্য গাইডবই দেয়া হয়েছে। এমনকি শিক্ষকরা তাদের প্রশিক্ষণ ও গাইডবই অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়ান কিনা সেটা মনিটরিং করারও ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্যদিকে বিবিসি জানালার মাধ্যমে অনলাইন, মোবাইল ফোন, টেলিভিশনে ধারাবাহিক নাটক ও গেমশো এবং একটি জাতীয় দৈনিকে শিক্ষা বিষয়ক পাতায় লেসন আকারে ইংরেজি শেখানো হচ্ছে। সব মাধ্যমে একই লেসন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া গত মাস থেকে এসব লেসন সিডি আকারে বাজারে ছাড়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রের উপযোগী ইংরেজি এসব লেসনে শেখানো হচ্ছে।
বিবিসি’র হেড অফ অপারেশন মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব সম্পর্কে যদি জানতে হয় তাহলে ইংরেজি বোঝা ও জানাটা খুবই জরুরি। ইংরেজিটাকে সব বয়সী মানুষের হাতের কাছে প্রায় বিনামূল্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে বিবিসি জানালা। এর মাধ্যমে হয়তো সবাই অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু তাদের ইংরেজিভীতি দূর হবে। তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ইংরেজিগুলো দেখে বুঝতে, পড়তে ও কাজে লাগাতে পারবেন। ইংরেজি শুনে কথা বলতে পারবেন। নিজের কর্মক্ষেত্রের যোগাযোগটা দক্ষ করতে পারবেন।
অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ইংরেজি শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে স্কুল। একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ইংরেজি শেখাতে হবে। প্রশিক্ষক দিয়ে বা কোর্স করে ভালো ইংরেজি শেখা যায় না। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শেখানো হলে ইংরেজি শেখার জন্য আলাদা কেোা কোর্স বা পদ্ধতির দরকার হবে না।
তিনি নিজের পর্যবেক্ষণের আলোকে বলেন, পরিচিত একটি ছেলেকে দেখেছি চীনে গিয়ে জুতার ব্যবসা করছে। তার কোম্পানির জুতা বিদেশেও রফতানি করা হয়। বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজে সে পড়াশুনা করেছিল। সে জানিয়েছে, চীনের অধিবাসীদের অনেকের চেয়ে তার ইংরেজি জ্ঞান অনেক ভালো। আর তাই সে নিজের দেশের বাইরে থেকেও এত ভালো ব্যবসা করতে পারছে। তাকে আলাদা একটি মর্যাদা দিয়েছে এই ভাষা। শ্রীলঙ্কানরা ভালো ইংরেজি বলতে পারে বলেই তারা বিভিন্ন দেশে কাজ করে আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু ভালো ইংরজে না জানার কারণে আমাদের দেশ থেকে যারা বাইরে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই শ্রমিক হিসেবে থাকছেন অথবা সে দেশের মানের তুলনায় কম বেতনে চাকরি করছেন।
অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন যে পদ্ধতিতে ইংরেজি শেখাচ্ছে সেটা যে ভুল তা নয়। কিন্তু তাদের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। এসব প্রতিষ্ঠানে কোর্স করার পর যারা কিছু জানে না তারা অন্তত কিছু শিখছে। আর যারা কিছু জানে তাদেরটা আরও একটু ভালো হচ্ছে।
অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে ইংল্যান্ডের কারিকুলাম ফলো করা হয়। যার কারণে এসব স্কুলে ছেলেমেয়েরা ইংরজে শিখলেও তারা বিদ্যালয় থেকে এদেশের উচ্চতর শিক্ষার কারিকুলাম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানছে না। তারা অনেকেই পরবর্তীতে বিদেশে চলে যাচ্ছে। কারণ, তারা প্রথম থেকেই বিদেশমুখী হয়ে যাচ্ছে। আর যারা ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে পড়ছে তারা এদেশের কারিকুলামও জানছে আবার ইংরেজিটাও বলতে পারছে। কিন্তু খুব বেশি ভালো যে করতে পারছে তা নয়।
তিনি বলেন, চারটা বিষয়ের সমন্বয়েই ইংরেজি শেখাতে হবে। এ চারটা বিষয় হলো বলা, শোনা, পড়া ও লেখা। কিন্তু বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে ইংরেজি পড়া ও লেখাটাকে শেখানো হয়। পরীক্ষা পদ্ধতিটাও একই। যার কারণে পরবর্তীতে এটা শিক্ষার্থীদের খুব একটা কাজে আসে না।

No comments:

Post a Comment