বিশ্বের জনপ্রিয় মোবাইল ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়া গ্রাহক, অংশীদার ও ডেভেলপারদের জন্য লন্ডনে বার্ষিক নকিয়া ওয়ার্ল্ডের আয়োজন করেছে সম্প্রতি। এবারের আয়োজনে নিত্যনতুন উদ্ভাবন, সার্ভিস ও এক্সেসরিজ প্রদর্শন করছে নকিয়া। এ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নকিয়ার পোর্টফলিওতে প্রথমবারের মতো সংযোজন করেছে উইন্ডোজ ফোনভিত্তিক ‘নকিয়া লুমিয়া’ ডিভাইস। এটি ছাড়াও নকিয়া আরো চারটি নতুন ফোন নিয়ে এসেছে। নকিয়ার এ বার্ষিক সম্মেলন নিয়ে লিখেছেন তামিম হাসান
লন্ডনের এক্সেল সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত ‘নকিয়া ওয়ার্ল্ড ’ অনুষ্ঠানে নতুন ফোন, সেবা ও যন্ত্রাংশের সংযোজন কিভাবে ঘটছে, তার বিবরণ তুলে ধরা হয়। গত মঙ্গলবার বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রায় তিন হাজার আমন্ত্রিত অতিথির সামনে উইন্ডোজ ফোন চালুর ঘোষণা দিয়েছে শীর্ষস'ানীয় মোবাইল ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়া। অনুষ্ঠানে নকিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিফেন এলপ জানান, নকিয়া স্মার্টফোন প্রবর্তন ও এর উন্নততর সংস্করণ নিয়ে আসাসহ নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের সামগ্রিক পোর্টফোলিও বা পণ্যসম্ভারকে সমৃদ্ধ করে চলেছি। এর অংশ হিসেবে নকিয়া লুমিয়া ৮০০ থেকে শুরু করে নকিয়া আশা ২০১ পর্যন্ত নিত্যনতুন ডিজাইনের মোবাইল ফোনগুলো মার্কেটে নিয়ে এসেছি।
নকিয়ার প্রথম স্মার্টফোন : উইন্ডোজ ফোনের আলোকে নকিয়া নিয়ে এসেছে প্রথম দু’টি লুমিয়া স্মার্টফোন। এগুলো ব্যবহারকারীদের প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তকেই আনন্দময় করে তুলবে। নকিয়া লুমিয়া ৮০০ ডিভাইসটি ব্যবহারকারীকে সর্বোত্তম সামাজিকতা ও ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম। এতে ইমেজ ক্যাপাবিলিটি বা ছবি তোলা এবং সিগনেচারের নতুন অভিজ্ঞতাসহ নকিয়ার সুপরিচিত অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। আর নকিয়া লুমিয়া ৭১০ হলো অত্যন্ত কালারফুল, অ্যাফোর্ডেবল ও নো-ননসেন্স স্মার্টফোন। সেটগুলোতে একাধারে স্টাইলিশ, স্মার্ট মোবাইল ফোন, সুপিরিয়র নকিয়া ম্যাপস এবং মনস্টারসহ অন্যদের সাথে অংশীদারিভিত্তিক কো-ব্র্যান্ডেড এক্সেসরিজ প্রভৃতি রয়েছে। স্টাইলিশ বা নান্দনিক ডিজাইনের এসব ফোন গ্রাহক বা ব্যবহারকারীদের সমৃদ্ধ সামাজিক অভিজ্ঞতা ও লোকেশন-অ্যাওয়ার টেকনোলজি স'ান চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তির সুবিধা দেবে।
নকিয়া লুমিয়া ৮০০ : ডিজাইন একেবারে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো চমৎকারিত্বে তৈরি করা হয়েছে নকিয়া লুমিয়া ৮০০ মোবাইল সেটটি। বিভিন্ন কালার বা রঙে (নীল, ম্যাজেন্টা ও কালো) এটির ডিজাইন করা হয়েছে। এ সেটের মাধ্যমে সর্বোত্তম সামাজিক ও ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। এতে রয়েছে ওয়ান টাচ সোস্যাল নেটওয়ার্কিং, কন্টাক্টের সহজ গ্রুপিং, সমন্বিত যোগাযোগের উপায়, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৯ প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এতে আছে ৩.৭ ইঞ্চির অ্যামোল্ড ক্লিয়ারব্যাক কার্ভড ডিসপ্লে, হার্ডওয়্যার এক্সিলারেশন ও গ্রাফিক্স প্রসেসরসহ ১.৪ গিগাহার্টজ প্রসেসরের বডিটাও দেখতে বেশ ছিমছাম। নকিয়া লুমিয়া ৮০০ মোবাইল ডিভাইসে আছে প্রথম সারির কার্ল জেসিস অপটিকসভিত্তিক ইনস্ট্যান্ট-শেয়ার ক্যামেরা এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার সুযোগ, এইচডি ভিডিও প্লেব্যাক, ১৬ গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনাল ইউজার মেমোরি এবং গান ও ছবির জন্য ২৫ গিগাবাইট (জিবি) ফ্রি স্কাইড্রাইভ স্টোরেজ। নকিয়া লুমিয়া ৮০০ মোবাইল ফোন সেটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২০ ইউরো।
নকিয়া লুমিয়া ৭১০ : সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নকিয়া লুমিয়া ৭১০ মোবাইল ফোন সেটটি তৈরি করা হয়েছে। এটি হলো অত্যন্ত কালারফুল, অ্যাফোর্ডেবল ও নো-ননসেন্স স্মার্টফোন। এতে আছে এক্সচেঞ্জেবল ব্যাক কাভার এবং এটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকেরা হাজার হাজার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে লুমিয়া এক্সপেরিয়েন্স নিতে পারবেন। ব্যবহারকারী বা গ্রাহকদের ইনস্ট্যান্ট সোস্যাল অ্যান্ড ইমেজ শেয়ারিং এবং আইই৯-এর সাহায্যে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা দেয়ার চিন্তাভাবনা থেকেই নকিয়া লুমিয়া ৭১০-এর ডিজাইন করা হয়েছে। কালো, সাদা, সাদা-কালো, চায়ান, গোলাপি বা লাল বা বেগুনি ও হলুদ প্রভৃতি রঙে তৈরি করা হয়েছে এই সেট। নকিয়া লুমিয়া ৮০০ মোবাইল ডিভাইসের মতো নকিয়া লুমিয়া ৭১০ মোবাইল ফোন সেটেও হার্ডওয়্যার এক্সিলারেশন ও গ্রাফিক্স প্রসেসরসহ ১.৪ গিগাহার্টজ প্রসেসর রয়েছে। নকিয়া লুমিয়া ৭১০ মোবাইল ফোন সেটের দাম ধরা হয়েছে ২৭০ ইউরো।
এসব স্মার্টফোনে সিগনেচার নকিয়া এক্সপেরিয়েন্সসহ উইন্ডোজ ফোন, নকিয়া ড্রাইভ, বিনা মূল্যে পরিপূর্ণ পারসোনাল নেভিগেশন ডিভাইস (পিএনডি), টার্ন-বাই-টার্ন নেভিগেশন, নিবেদিত ইন-কার-ইন্টারফেইস প্রভৃতি রয়েছে। সেই সাথে নকিয়া মিউজিকের জন্য আছে বিনা মূল্যে মিক্সরেডিও শোনার ব্যবস'া। বিশ্বব্যাপী এ ধরনের শত শত চ্যানেল রয়েছে। যেগুলো সাধারণত স'ানীয় মিউজিকই পরিবেশন করে থাকে।
স্মার্টফোন ছাড়াও নকিয়া আশা ৩০০, নকিয়া আশা ৩০৩, নকিয়া আশা ২০০ ও নকিয়া আশা ২০১ এই চারটি ফোন তৈরি করা হয়েছে নকিয়ার স্মার্টফোন ও ফিচার ফোনের মাঝামাঝি আদলে। এসব ডিভাইসে ব্যবহারকারীরা কোয়ার্টি ও টাচ স্ক্রিনের অভিজ্ঞতাসহ দ্রুত ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সমন্বিত সামাজিক নেটওয়ার্কিং, মেসেজিং বা বার্তা আদান-প্রদান ও নকিয়া স্টোরের বিশ্বমানের অ্যাপ্লিকেশন্সগুলো ব্যবহারে সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
নকিয়া ম্যাপস : গ্রাহকদের প্রতিটি দিনকেই সহজতর করে তুলতে একটি অনন্য লোকেশন সার্ভিস চালু করেছে নকিয়া। লোকেশনভিত্তিক অফারের অব্যাহত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবারে নকিয়া ম্যাপ এবং উইন্ডোজ ফোনের জন্য নকিয়া ড্রাইভের সর্বশেষ সংস্করণ নিয়ে এসেছে নকিয়া। এগুলোসহ নকিয়ার অন্যান্য ম্যাপ সম্পর্কিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোও প্রদর্শনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে নকিয়া ওয়ার্ল্ডে, যাতে কম্পিউটারের যাতায়াত ও জনবসতিপর্ণ শহরের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো চিহ্নিত করার উপায় তুলে ধরা যায়। এ ছাড়াও নকিয়া এবারে ‘নকিয়া পালস’ নিয়ে এসেছে, যেটির সাহায্যে লোকেশনসংক্রান্ত আপডেট ও ছবি বা চিত্র ব্যক্তিগতভাবে আরেকজনের কাছে পাঠানোর যায় এবং লোকেশন নিয়েও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাথে আলাপচারিতা শুরু করা যায়। নকিয়া এই অনুষ্ঠানে নকিয়ার লাইভ ভিউ নিয়ে এসেছে, যেটি ফোনের ক্যামেরাটিকে ভিউ ফাইন্ডারের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। নকিয়া লাইভ ভিউর সাহায্যে নির্দিষ্ট কোনো বিল্ডিং বা ভবন, স্ট্্িরট বা রাস্তা এবং কোনো কিছু বা জায়গার নামের ওপর ক্যামেরা ফোকাস করা যায়, তা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হোক আর রেস্তোরাঁ হোক কিংবা আকর্ষণীয় কোনো কিছু হোক একবার ক্লিক করেই কাঙ্ক্ষিত তথ্যচিত্র তোলার কাজটি সেরে ফেলা যায়। আজ নকিয়ার যেসব অ্যাপ্লিকেশন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো নকিয়ার বেটা ল্যাবে পাওয়া যাবে।
No comments:
Post a Comment