ক্যালিফোর্নিয়ার সানজোসে শহরে অসাধারণ প্রতিভাধর স্টিভ ওজনিয়্যাক জন্মগ্রহণ করেন। ওজনিয়্যাকের ডাকনাম উজ। পড়ালেখায় অনাগ্রহী বিজ্ঞানী ১৯৭৫ সালে ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বানাতে শুরু করেন। শুরুতে তার আবিষ্কারের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের কম্পিউটার ক্লাবের সদস্যদের একটুখানি মুগ্ধ করা। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়্যাকে নিয়ে লিখেছেন আহমেদ ইফতেষার
১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস ওজের কাজে মুগ্ধ হয়ে উজনিয়্যাকের সাথে নিয়ে অ্যাপলের পথচলা শুরু করেন। উজের সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ও স্টিভ জবসের ভক্সওয়াগনটি বিক্রি করেন ১৩০০ ডলারে।
আবিষ্কার : জবসের বাসার গ্যারেজে এই টাকায় তারা দুইজন রাত-দিন পরিশ্রম করে তৈরি করলেন কাঙ্ক্ষিত সেই কম্পিউটারের প্রটোটাইপ বা নমুনা। তাদের প্রথম এই কম্পিউটারটি ছিল সেই সময়ের হিসেবে অসাধারণ একটি যন্ত্র। দুইজনের উদ্ভাবিত ‘অ্যাপল-১’ কম্পিউটার প্রযুক্তি সত্তর দশকে চরম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ সমসাময়িক সময়ে বাজারে যেসব কম্পিউটার ছিল তার কোনো ডিসপ্লে ও স্টোরেজ ব্যবস'া ছিল না। এমনকি আউটপুটও আসত লাইট ফ্লাশিংয়ের মাধ্যমে। অন্য দিকে উজের কম্পিউটার অ্যাপল-১ ছিল সবদিক থেকেই দারুণ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অ্যাপল ১-এর সফলতার পর ১৯৭৬ সালে দুই বন্ধু গঠন করলেন প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান অ্যাপল। উজ তার পুরো সময় ও মেধা ব্যয় করলেন অ্যাপল ১-এর উন্নয়নে। কিছু দিনের মধ্যেই তিনি উদ্ভাবন করলেন অ্যাপল-২, যাতে ছিল উন্নত রেজুলেশনের ছবি প্রদর্শনের ব্যবস'া। এভাবে হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশ ডিজাইনের পাশাপাশি উজ নিজেই অ্যাপলের বেশির ভাগ সফটওয়্যারও তৈরি করলেন।
মাত্র অল্প কয়েক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৮০ সালে উজ মিলিয়নিয়ার খাতায় নাম লেখালেন। শুরুতে উজকে অ্যাপল কম্পিউটারের গডফাদার বলা হতো।
১৯৮১ সালে উজ এক বিমান দুর্ঘটনায় কিছু দিনের জন্য তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিভাবে এই দুর্ঘটনাটি ঘটল এবং কোথায়- এসব কোনো তথ্যই তার মনে রইল না। পরে উজের স্মৃতিশক্তি ফিরে আসে। তবে ওজ আর অ্যাপলে না গিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি বার্কলেতে ফিরে এলেন এবং ১৯৮৭ সালে তার স্নাতক পড়াশুনা শেষ করলেন। এ বছরের শেষের দিকে উজ নতুন কোম্পানি তৈরি করেন, যার নাম ছিল ক্লাউড-৯। এ প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল ইউনিভার্সাল রিমোট কন্ট্রোল তৈরি করা। ২০০২ সালে তিনি তারবিহীন গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের উদ্ভাবন করেন। একই বছর তিনি ডেনগার ইনকর্পোরেটের বোর্ড অব ডিরেক্টরদের একজন হিসেবে যোগ দেন এবং টি-মোবাইলের জন্য হিপটপ নামের একটি প্রযুক্তি তৈরি করেন।
সম্মাননা : আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তাকে প্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য ন্যাশনাল মেডল অব টেকনোলজি প্রদান করলেন। ২০০০ সালে আমেরিকার জাতীয় উদ্ভাবকদের তালিকায় যুক্ত করা হয় উজের নাম। কম্পিউটার জগতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে ড. টম মিলারের উদ্যোগে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় উজকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০৫ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন মিশিগান ও ফ্লোরিডার দু’টি নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওজকে নিয়েও বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছে ডকুড্রামা ও কার্টুন চিত্র। প্রতিভাবান এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী তার প্রথম জীবনে পারসনাল কম্পিউটারের উন্নয়নের জন্য অবদান রাখেন কিন' পরে কম্পিউটারের কাছ থেকে সরে এসে নিয়োজিত হন সমাজসেবায়।
No comments:
Post a Comment