Monday, October 17, 2011

ঢাকাতেই তৈরি হচ্ছে টাকার সফটওয়্যার




ঢাকাতেই তৈরি হচ্ছে নকল টাকা তৈরির সফটওয়্যার। সাইবার ক্রিমিনাল ও কুখ্যাত আইটি বিশেষজ্ঞরা এসব সফটওয়্যার তৈরি করে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করছে। এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঘরে বসেই অপরাধীরা নকল টাকা তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাল টাকার তিন কারবারি হুমায়ুন কবির, আবুল খায়ের ও পলাশ এসব তথ্য জানিয়েছে। গতকাল তাদের দু’দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর আগে দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, জাল টাকা তৈরির সফটওয়্যার নির্মাতা, জাল নোট বিপণনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলাভিত্তিক নিয়োগ করা ডিলারদের গ্রেপ্তার ও বাজারে ছড়িয়ে পড়া নকল নোট উদ্ধারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জাল টাকার কারবারিদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছে। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নকল নোটের কারবারিরা জানিয়েছে, টাকা তৈরির বেশির ভাগ কেমিক্যাল ভারত থেকে আমদানি করা হয়। নকল টাকার নোট ছাপানোর জন্য রাজধানীর নয়াবাজার থেকে কাগজ সংগ্রহ করা হয়। ওই কাগজ ইন্দোনেশিয়া থেকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তারা তথ্য দেয়। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন কবীর জানায়, নকল টাকা তৈরির সফটওয়্যার দেশেই তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন মানের সফটওয়্যার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। একেক নোটের জন্য একেকটি সফটওয়্যারের প্রয়োজন পড়ে। একেকটি সফটওয়্যারের দাম ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. গোলাম আজাদ খান বলেন, জাল টাকার কারবারি জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ৫ ধরনের নোট ছাপানোর ৫টি সফটওয়্যার উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নকল নোটের সফটওয়্যার রয়েছে। এসব সফটওয়্যার নির্মাতা ও সরবরাহকারীদের সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, মিরপুর, উত্তরা ও গাজীপুরের কয়েকটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সাইবার ক্রিমিনালরা বিভিন্ন মানের জাল টাকা তৈরির সফটওয়্যার তৈরি করছে। অসাধু লোকজনের গোপন অর্ডারের মাধ্যমে এসব সফটওয়্যার তৈরি করে তা সরবরাহ করা হয়। উল্লেখ্য, গত শনিবার রাজধানীর কদমতলীর একটি বাড়ি থেকে ১৫ লাখ টাকার জাল নোটসহ জাল টাকার কারবারী জাহাঙ্গীর (৩৪)-কে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা। কদমতলীর ৮৯ নম্বর হাজী রজ্জব আলী সর্দার রোডের একটি বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগের দিন শুক্রবার মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে হুমায়ুন কবীর ও আবুল খায়ের গ্রেপ্তার করা হয়। এ দু’জনের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী জাল নোটের বিপণন শাখার প্রধান পলাশকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা। গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, আসল ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা নকল এক লাখ টাকার নতুন চকচকে বান্ডিল বিক্রি করে থাকে। নকল টাকা বিক্রির জন্য তাদের বিভিন্ন জেলাভিত্তিক ডিলার নিয়োগ করা আছে। এ ডিলারের অধীনে নকল টাকা রাজধানী ঢাকাসহ এর বাইরে বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে। গোয়েন্দারা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে ক্রিমিনালরা নকল টাকা তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই তারা জাল নোট তৈরির একটি সফটওয়্যার সংগ্রহ করে। তার সঙ্গে কম্পিউটার ও দু’টি প্রিন্টার যুক্ত করে। এছাড়া উন্নতমানের কালি, আঠা, স্ক্রিন ডিভাইস, তরল মেডিসিন ও বিশেষ ধরনের দুই পদের কাগজ সংগ্রহ করে থাকে। টাকার সিকিউরিটি থ্রেড (নিরাপত্তাসূচক সূতা)-ও নিজেরাই তৈরি করে। বেতনভুক্ত কর্মচারী নিয়োগ করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তৈরি করে। পরে বিভিন্ন জেলার সহজ-সরল মানুষকে টার্গেট করে রাতারাতি কোটি পতি হওয়ার লোভ দেখিয়ে নকল নোট বাজারজাত করার কাজে লাগায়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, কুখ্যাত সাইবার ক্রিমিনালরা আসল টাকা দেখে নকল টাকা তৈরির সফটওয়্যার তৈরি করছে। এসব অপরাধীদের শনাক্ত করতে না পারলে বাজারে নকল নোটে ছেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নোট তৈরির জন্য উন্নতমানের অফসেট ও খসখসে দুই ধরনের কাগজ ব্যবহার করে। দুই পদের কাগজের মাঝখানে স্ক্রিনের সাহায্যে ও বিশেষ কৌশলে জলছাপ, বাংলাদেশ ব্যাংক, গভর্নরের স্বাক্ষর, বঙ্গবন্ধুর ছবি, শহীদ মিনার, টাকার নম্বর ও নিরাপত্তাসূচক সূতা (সিকিউরিটি থ্রেড) বসিয়ে উন্নতমানের আঠা লাগিয়ে দেয়। এরপর এতে বিভিন্ন ধরনের কালি, রঙ ও মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। কাগজে আঠা লাগানোর আগেই স্ক্রিনের সাহায্যে জলছাপ দেয় তারা। টাকার যে অংশে কোন কিছু থাকে না অর্থাৎ ফাঁকা থাকে কেবল ওই অংশেই প্রথমে আঠা লাগিয়ে দেয়। পরে অন্যান্য অংশে আঠা লাগিয়ে বিশেষ কৌশলে কাটিং করে। এক পাতা কাগজ দিয়ে একই নম্বরের ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার ৪টি নোট তৈরি করে তারা। এভাবে একটি কম্পিউটার ও দু’টি প্রিন্টারের সাহায্যে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকা তৈরি করা হয়।

No comments:

Post a Comment