Monday, October 17, 2011

সামাজিক এবং ছাএ উন্নয়ন সংগঠন


সামাজিক এবং ছাএ উন্নয়ন সংগঠন(SSDO): সামাজিক এবং ছাএ উন্নয়ন সংগঠন একটি অলাভজনক সংগঠন।আমাদের উদ্দেশ্যে সেবা করা।সমাজের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ভাবে সেবা করাই এই সংগঠন এর প্রধান কাজ।আমাদের কাজকে ক্ষুদ্র বলে অবেহেলা করবেন না।আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সমাজের অনেক মহৎ মানুষ আমাদেরকে সব ধরনের সহায়তা করবেন।আমাদের মধ্যে অনেকেরই আছে মেধা;আবার অনেকের আছে অর্থ,অনেকে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন।আপনাদের  সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের সহায়তা করে আমাদের পাশে থাকুন।আমরা আশা করি আপনাদের সহায়তাই  আমাদের এই  সংগঠনকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।আমরা ছাএদের অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন শিক্ষা দিতে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ এই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বোঝাতেই রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-
"বিশ্বজোড়া পাঠাশালা মোর
সবার আমি ছাত্র,
নানাভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্রি"




লক্ষ্যঃ
Ø সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা
উদ্দেশ্যে:
ü জ্ঞান চর্চা করা।
ü শিক্ষার মান উন্নয়ন।
ü ছাএদের সঠিক এবং যথার্থ দিক-নিদের্শনা দেওয়া।
ü মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
ü সামাজিক উণ্ণয়ন মূলক কাজে আবদান রাখা।
ü আত্ন-মানবতার সেবা।
ü সমাজ হতে নিরক্ষরতা দূরীকরণ।
ü মাদকমুক্ত সামাজ গঠনে সহায়তা করা।
ü সকল ধরনের অসামাজিক কাজের প্রতিরোধ করা।
ü সামাজিক অস্থিরতা দূরীকরণে সহায়তা করা।
ü সামাজিক বনায়ন করার জন্য সবাইকে উৎসাহ দেওয়া।
ü পরিবেশ দূষণ রোধ করতে সহায়তা করা।
ü নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জনে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা বোধের বিকাশের জন্য পারস্পারিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তু নিষ্ঠ ইতি বাচক দৃষ্টি ভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা


সাধারন সদস্য হবার নিয়ম:
Ø বিনা-পারশ্রমিকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
Ø ৫০ টাকার বিনিময় ফরম সংগ্রহ করতে হবে।
Ø দুই কপি ছবিসহ ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে দিন এর মধ্যে।
Ø প্রতি মাসে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে।
 ছাএদের সদস্য হবার নিয়মঃ
Ø বিনা-পারশ্রমিকে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
Ø সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় থাকতে হবে।
Ø যে কোন শ্রেণীর একসেট পুরাতন বই দিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হবে।অথবা ৫০ টাকার বিনিময় ফরম সংগ্রহহ করতে হবে।তারপর দুই কপি ছবিসহ ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে দিন এর মধ্য।
Ø প্রতি মাসে টাকা করে চাঁদা দিতে হবে।







স্থায়ী সদস্য:
.আসিফ কবির রনি
.মোঃশাহ্ আলম
.মোঃঝুমানুর রহমান
.মোঃমোক্তার হোসেন
.মোঃআবদুর রহমান
.মোঃইয়াকুব
.মোঃহাসান
.মোঃশাহাজাদা


বিশেষ সদস্যঃ
মোঃনূরুল হক

শিক্ষা

শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয় সাধারন অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগত ভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে তবে শিক্ষা হল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‍'শাস' ধাতু থেকে যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ education এসেছে ল্যাটিন শব্দ educare বা educatum থেকে যার অর্থ to lead out অর্থাৎ ভেতরের সম্ভবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা সক্রেটিসের ভাষায় 'শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন সত্যের বিকাশ' 'সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা'- এরিস্টটল রবীন্দ্রনাথ এর ভাষায় 'শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিরেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে
শব্দের উৎপত্তি
শিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত "সাস" ধাতু থেকে সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্খিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা যুগে যুগে নানা মনীষী নানাভাবে শিক্ষাকে সজ্ঞায়িত করেছেন আবার সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার সজ্ঞার বা ধারণাও পরির্বতন এসেছে
শিক্ষার উদ্দেশ্য
শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলো হল-
. শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে পূর্ববর্তী স্তরের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা দৃষ্টি ভঙ্গির ভিত দৃঢ় করা এগুলো সম্পসারণে সহায়তা করা এবং নবতর জ্ঞান দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা
. দেশবাসী কে দেশপ্রেম ওএ উদ্বুদ্ধ করা এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সচেতন করে তোলা
. ব্যক্তি জাতীয় জীবনের নৈতিক, মানবিক ধর্মীয় সাংস্কৃতিক সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা কল্পে শিক্ষার্থীদের মননে কর্মে ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা
. দেশে নিরক্ষরতার অবসান ঘটানো
. শিক্ষাকে ব্যাপক ভিত্তিক করার লক্ষ্যে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া এবং শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে পূর্ববর্তী স্তরের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা দৃষ্টিভঙ্গির ভিত দৃঢ় এগুলো সম্প্রসারনে সহায়তা নবতম জ্ঞান দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা
. দেশের অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষাকে প্রয়োগমুখী উৎপাদনক্ষম সৃজনশীল করে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি সম্পন্ন দায়িত্ববান কর্তব্য পরায়ন জনশক্তি করে গড়ে গড়ে তোলা
. সমাজের প্রতিস্তরের মানুষকে নিজ নিজ মেধা প্রবণতা অনুসারে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেয়া
. বৃত্তিমূলক দক্ষতা সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা এবং বিমুখ মানসিকতা দূর করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা
. বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা কর্মানুরাগ বৃদ্ধি করে বিপুল জনশক্তিকে জাতীয় সম্পদে পরিনত করা
১০. জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করে জাতির প্রাণে নতুন প্রেরনার সঞ্ঝার সম্ভব হয়
১১. মৌলিক চিন্তার স্বাধীনতা প্রকাশে শিক্ষার্থীর অনুপ্রাণিত করা এবং সমাজেমুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটানো
১২. নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জনে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা বোধের বিকাশের জন্য পারস্পারিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তু নিষ্ঠ ইতি বাচক দৃষ্টি ভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা
১৩ বিশ্বের সকল দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বভাতৃত্ব বোধ, অসাম্প্রদায়িকতা, সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা বোধ এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলা এবং তাদের বস্তুনিষ্ঠ, বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ সচেতন মানুষে পরিনত করা
১৪ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা এবং তাদের চিন্তা চেতনায় জাতীয়তাবোধ এবং চরিত্রে সুনাগরিকের গুনাবলীর বিকাশ ঘটানো
১৫ জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতির ধারা নৈতিক মূল্যবোধ বিকশিত করে বংশ পরস্পরায় হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা
১৬ শিক্ষার গুণগতমান সবপর্যায়ে সমুন্নুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
১৭ পরিবেশ সচেনতা সৃষ্টি করা
১৮ শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে পূর্ববর্তী স্তরের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা দৃষ্টি ভঙ্গির ভিত দৃঢ় করা এগুলো সম্পসারণে সহায়তা করা এবং নবতর জ্ঞান দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধারাবাহিক এবং ক্রম উচ্চস্তরে বিন্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে বোঝানো হয় আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকে শিক্ষার্থী একটি বয়সে আনুষ্ঠানিক উপায়ে শিক্ষা অর্জন শুরু করে এবং ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে থাকে
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা (Informal Education) শিক্ষার একটি উল্লেখ্যযোগ্য ধরন মানুষ তার জন্মের পর থেকে  নানাভাবে শিখছে এই শিক্ষা তার সমাজের কাছ থেকে হচ্ছে,
পরিবারের কাছ থেকে হচ্ছে, আবার গুরুজনের বা বিশিষ্ট-অবিশিষ্ট ব্যক্তি বা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমেও হচ্ছে আবার প্রকৃতি কাছ থেকেও মানুষ শিখছে প্রতিনিয়ত তার শেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে শেখে এই যে অনির্দিষ্ট নানা উপায়ে মানুষ শিখছে এটাই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাই আমাদের শেখার বা আচার-আচরণের অনেক বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দেয় জন্মের পর একটি শিশু কীভাবে কথা বলতে হবে তাকে আলাদা করে শেখাতে হয় না, সে নিজে নিজে তার পরিবারের সবাইকে দেখেই শেখে এইভাবেই সূচনা হয় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রাচীন সমাজে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল শিক্ষা লাভের একমাত্র উপায় এবং শিক্ষা ছিল সর্বজনীন বাঁচার জন্য এবং বাঁচার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা অর্জিত হতো তখন সামাজিকীকরণ শিক্ষার মধ্যে কোন প্রভেদ ছিল না আধূনিক সমাজে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আধিপত্য সত্ত্বেও পারিবারিক শিক্ষাই এখনো শিশুর মানসিক বিকাশ চরিত্র গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে
এই অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে বোঝাতেই রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-
"বিশ্বজোড়া পাঠাশালা মোর
সবার আমি ছাত্র,
নানাভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্রি"

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার একটি ধরন মূলত উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক পেক্ষাপটের আলোকে এই ধারার উৎপত্তি সাধারণত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতি বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে, সুনির্দিষ্ট জনগোষ্টির জন্য, বিশেষ উদ্দেশ্যে সংঠিত এবং বিশেষ শিখন চাহিদা পূরণের জন্য, আলাদাভাবে বা সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত শিক্ষামূলক কার্যক্রমই হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা (non formal education)

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ধারণা নতুন নয় উন্নয়শীল দেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার আগেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে (drop out) বা কোন না কোন কারণে প্রাথমিক শিক্ষাচক্র (primary education cycle) সমাপ্ত করার আগেই স্কুল থেকে ঝরে পরে ফলে এইসব দেশে এইভাবে নিরক্ষর জনগণের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাই তাদের মানে এইসব দেশের বিশাল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত অসুবিধাগ্রস্থ (disadvantaged) ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ (second chance of education) প্রদান করা যায় তাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ দানকারী কার্যক্রমও বলা হয়
আবার উন্নয়শীল দেশসমূহে দেখা যায় সরকারের একার পক্ষে সকল শ্রেণির সকল মানুষের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না তাই সেইসব ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সহায়ক/সম্পূরক পরিপূরক (supplementary and complementary) হিসেবেও কাজ করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা তবে কখনই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে না

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য-
এটি একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা
শিক্ষাক্রম নির্দিষ্ট নয়, আর থাকলেও শিথিলযোগ্য
ডিগ্রীমুখী বা সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা নয়
এটি স্থানীয় সুযোগ সুবিধা ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুসারে বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়
ব্যবহারিক দিকগুলোর প্রতি বেশী লক্ষ রাখা হয়
আলাদাভাবে পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা নেই তবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা আছে।

সামাজিক কবনায়ন
বনায়ন বর্তমান বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আর শিল্প বিপ্লবের বেগবান গতিতে আমাদের চিরচেনা প্রকৃতি আজ তার রুপ-যৌবন হারাতে বসেছে।আমরা হারাতে বসেছি বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন নিমর্ল পরিবেশ। তাই সুস্থ-সুন্দর জীবনের জন্য সবুজ প্রকৃতি রক্ষার্তে গাছ লাগানোর মাধ্যমে বনায়ন ব্যাতীত বিকল্প কোন পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। আর এ জন্য আমাদেরকে প্রথমেই জানতে হবে কি কি গাছ কোথায় কোথায় লাগাতে হবে।

কোথায় লাগাবেন কি গাছ ?
পরিবেশ রক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চারিদিকে চলছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই সঠিক স্থানে সঠিক চারা রোপনের সময় এখনই। জেলা ও উপজেলা বৃক্ষমেলা কিংবা নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা যায়। সুস্থ, সবল, মধ্যমাকৃতির, পরবর্তী বংশধরদের কথা চিন্তা করে ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা লাগানোর প্রতি বেশি নজর দেয়া উচিত। এতে ফল, ঔষধ এবং কাঠ সবই পাওয়া যায়। বন্যামুক্ত, আলোবাতাস চলাচল করতে পারে এবং সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গায় চারা রোপণ করা উচিত। দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ, উর্বর, নিষ্কাশনযোগ্য ও উঁচু স্থানে চারা রোপণ করা উত্তম। কোথায় কোন চারা রোপণ করা উচিত তা জেনে নেই।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে:
যেমন- মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশেপাশে শোভাবর্ধনকারী এবং ছায়া দানকারী গাছ যেমন, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, লিচু গাছ রোপণ করতে পারেন।

বসতবাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে:
রোদ ও আলোর জন্য ছোট এবং কম ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদী, গাছ লাগানো যেতে পারে।




বসতবাড়ির পূর্ব-পশ্চিমে:
মাঝারি উঁচু এবং মাঝারি ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। এতে সকাল-সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায় আলো থাকবে। বাউকুল, আপেলকুল, সফেদা, আম্রপালি, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন গাছ।

বসতবাড়ির উত্তরে:
বসতবাড়ির উত্তরপাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, বাঁশ, ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

পতিত জমিতে:
সব ধরনের গাছ যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাঁশ ইত্যাদি।

হাট-বাজারে:
ছায়দানকারী গাছ রোপণ করা উচিত। আম, কাঁঠাল, জাম, সেগুন, দেবদারু, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, কৃষ্ণচূড়া, বটগাছ রোপণ করা উচিত।

রাস্তার পাশে:
উঁচু, ও ডালপালা ছাঁটাই করা যায় এমন গাছ রোপণ করা দরকার। মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিল ইপিল, শিমুল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়। গাঁয়ের পথের দুধারে বা ফিডার রোডের পাশে শিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিল ইপিল, পাইন্যাগোলা বা লুকলুকি, মান্দার, পালিত মাদার, পানিয়া মাদার, বাবলা, খয়ের, বকফুল, তাল, খেজুর ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে। বড় রাস্তা বা মহাসড়কের পাশে কৃষচূড়া, কনকচূড়া, রেইনট্রি, গগন শিরীষ, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিশু, মেহগনি, অর্জুন, দেবদারু, সোনালু, নিম, নাগেশ্বর, আকাশমণি, বকুল, পলাশ, তেলসুর, ঝাউ, বটল পাম প্রভৃতি গাছ লাগানো যায়।

রেল লাইনের পাশে:
মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, শিমুল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

বাঁধের ধারে:
শেকড় শক্ত এবং বিস্তৃত এমন গাছ যেমন বট, আমড়া, বাঁশ, মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর ইত্যাদি গাছ রোপণ করা দরকার।

জমির আইলে:
যেসব গাছের শেকড় কম বিস্তৃত কম ছায়াদানকারী, ডালপালা ছাঁটাই করা যায় যেমন- মেহগনি, দেবদারু ইত্যাদি গাছ রোপণ করতে হবে। আজকাল জমির ভেতরেও গাছ লাগানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই ইউক্যালিপটাসকে বেছে নিয়েছেন। ফসলের ক্ষেতে দূরে দূরে অল্প কিছু এরূপ গাছ লাগানো যেতে পারে। বরেন্দ্র এলাকায় এখন ধানের জমিতে মাটির ঢিবি তৈরি করে সেখানে ব্যাপক হারে আমগাছ লাগানো হচ্ছে। এমনকি জমির আইলেও অনেক গাছ লাগানো হয়। অনেক জায়গায় আইলে তালগাছ লাগিয়ে বাড়তি লাভ পাওয়া গেছে। তাল ছাড়া খেজুর, সুপারি, বাবলা, বকাইন, জিগা, কড়ই, ইউক্যালিপটাস, পালিত মাদার ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে।

নিচু জমিতে:
জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে এমন গাছ রোপণ করা দরকার। পিটালি, বেত, মূর্তা, বাঁশ, মান্দার, জারুল, হিজল, কদম ইত্যাদি গাছ নিচু জমিতে রোপণ করা যেতে পারে।

পুকুর পাড়ে:
মাটি ভাঙ্গে না এবং শোভাবর্ধন করে যেমন সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, ডালিম ইত্যাদি গাছ লাগানো যায়।

নদীর ধারে:
পানি সহিষ্ণু, শক্ত মজবুত ও বড় হয় এমন গাছ রোপণ করা উচিত। যেমন- শিমুল, ছাতিম, পিটালি, বেত, বাঁশ, মূর্তা, মান্দার, জারুল, হিজল, কদম ইত্যাদি।

বিলে লাগানোর গাছ:
বিল এলাকা যেখানে বছরে দু-তিন মাস পানি জমে থাকে সেখানে হিজল, করচ, বিয়াস, পিটালী, জারুল, মান্দার, বরুণ, পলাশ, কদম, চালতা, পুতিজাম, ঢেপাজাম, রয়না বা পিতরাজ, অর্জুন ইত্যাদি গাছ লাগানো যায়।

চরে লাগানোর গাছ:
উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন জেগে ওঠা চরে কেওড়া, বাইন, কাঁকড়া, গরান, গোলপাতা গাছ লাগানো যায়। তবে উপকূলে যেসব চর একটু উঁচু ও স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ওঠে না সেসব চরে বাবলা, ঝাউ, সনবলই, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, জারুল, রেইনট্রি ইত্যাদি লাগানো যায়। উপকূল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে ঝাউ, লোনাঝাউ, পিটালী, করচ, পানিবিয়াস লাগানো যেতে পারে।

উপকূলীয় অঞ্চলে:
লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, হালকা পাতাবিশিষ্ট গাছ যেমন- সুন্দরী, ছৈলা, গরান, গেওয়া, গোলপাতা, মান্দার, কড়াই, বাবলা, নারিকেল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা উচিত।

উঁচু পাহাড়:
বর্তমানে দেশের অনেক পাহাড়ি জমিতে কমলালেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির লেবু, লিচু, আম, পেয়ারা, গোল মরিচ, আদা, আনারসের সফল বিস্তার ঘটেছে। এছাড়াও তেলসুর, চাপালিশ, চিকরাশি, শিলকড়াই, গর্জন, গামার, সেগুন, ইপিল-ইপিল, বাঁশ, কাজুবাদাম প্রভৃতি কাঠের চাহিদা মেটাতে সহায়ক।

বৃক্ষ ব্যবস্থাপনা:
চারা লাগিয়ে ফলের আশায় বসে থাকলে হবে না। সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। যেমন- বাগানে পরিচর্যার ফলে ২০ থেকে ৪০ ভাগ ফল বেশি উত্পাদন সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিচর্যার কথা উল্লেখ করা হল-
১. চারা রোপণের সাথে সাথে শক্ত কাঠি দিয়ে চারা সোজা করে বেঁধে দিতে হবে;
২. গরু-ছাগলের নাগাল থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের খাঁচা দিয়ে চারা রক্ষা করতে হবে;
৩. চারার গোড়ায় জন্মানো অবাঞ্চিত আগাছা বাড়ন্ত চারার খাবারে ভাগ বসায়, তাই নিয়মিত আগাছা দমন জরুরি;
৪. শীতকালে, মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে শুকনো লতাপাতা, খড়, কচুরিপানা দিয়ে চারার গোড়ায় মালচিং করতে হবে;
৫. কোনো চারা দুর্বল, রোগাক্রান্ত বা মারা গেলে ওই জায়গায় আর একটি নতুন সবল চারা লাগাতে হবে;
৬. চারা সোজা রাখা ও নির্দিষ্ট কাঠামো ঠিক রাখতে অবাঞ্চিত ডালপালা কেটে ফেলতে হবে;
৭. বৃষ্টি না হলে রোপণের পর ঝরণা দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে;
৮. চারার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য রোপণের একমাস পর গোড়ার একফুট দূর দিয়ে নালা তৈরি করে এতে ১০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে;
৯. ফলগাছের বেলায় প্রতি বছর বর্ষার পূর্বে একবার (বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ) ও বর্ষা শেষে (ভাদ্র-অশ্বিন) আর একবার বয়স এবং জাতভেদে পরিমাণমত জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে;
১০. প্রতিবছর ফল পাড়ার পর পুরানো, রোগাক্রান্ত, মরা ডালপালা ছেটে দিয়ে রোদ ও আলো বাতাস চলাচল বাড়িয়ে দিতে পারলে পরের বছর নতুন ডাল পালায় ফুল-ফল বেশি ধরবে;
১১. রোগবালাই পোকামাকড় দমনের জন্য নিকটস্থ কৃষি বিভাগ, হর্টিকালচার সেন্টার বা বন বিভাগের পরামর্শমত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সারকথা:
যেমন জায়গা তেমন গাছ তো হলো। কিন্তু গাছ নির্বাচন করলেই তো সব হয় না। সেগুলো লাগানোর ক্ষেত্রে আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় রেখে লাগানো দরকার। লাগানোর আগে ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। যেমনন্ধ রাস্তার ধারে যতই বলা হোক চম্বল বা গগন শিরীষ ও ইউক্যালিপটাস লাগাতে, যদি সে রাস্তার পাশ দিয়ে বিদ্যুতের তার যায় তাহলে সেখানে তা লাগানো যাবে না। ফসলি জমিকে বেশি ছায়া দিতে পারে এমন গাছ না লাগানো উচিত। পুকুরপাড়ে পাতা ঝরা বৃক্ষ যেমন কাঠবাদাম, শিমুল, মান্দার গাছ লাগানো যাবে না। কাঠগাছের বাগান করলে বেশ কয়েক রকমের গাছ লাগিয়ে মিশ্রভাবে করা ভালো। গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত প্রথম দুবছর গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ফসল চাষ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিল, সরিষা, হলুদ, মুগ ও মাষকলাইয়ের চাষ করা যায়। এর পর থেকে কিছু গাছ কেটে পাতলা করে দিতে হবে এবং বেয়াড়া ডালপালা ছেঁটে গাছকে সোজা ও লম্বাভাবে বাড়তে দিতে হবে। এতে গাছের লগ ভালো হয়, কাঠমূল্য বাড়ে। কাঠের গাছ নির্দিষ্ট বয়সে এলে তাতে সার হয়, কাঠের দাম কয়েক গুণ বাড়ে। তাই বয়স অনুযায়ী সার বানিয়ে গাছ কাটতে হবে, অল্প বয়সী গাছ অযথা কাটা ঠিক নয়। এসব নিয়ম মেনে গাছ লাগালে বেশি লাভ হবে।
সরকারি-বেসরকারি নার্সারি, বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা, এনজিও নার্সারি, ব্যক্তিগত নার্সারি, বিএডিসির নার্সারি, কৃষি গবেষণার নার্সারিতে ভাল চারা পাওয়া যায়। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য কলমের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। যে কোন পরামর্শের জন্য আপনার নিকটস্থ কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।

                                 











No comments:

Post a Comment